
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত, ষড় ঋতুর দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্ব খ্যাত হলেও দীর্ঘ গরম কালই আমরা বেশী অনুভব করি। তাই তো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে মার্চ মাস আসতে না আসতেই গরমের চোট শুরু, যার নমুনা সরূপ প্রায়ই শোনা যায় ‘রোদে গা পুরে ছাই’ বা ‘একটুও যদি বাতাস থাকতো’ বা ‘বাতাসটাও আজকে এমন যেন লূ বইছে’।
এই অসহ্য গরম আমরা বড়রা সহ্য করে গা ঝারা দিলেও আমাদের ছোট্ট সোনামণি শিশুদের জন্য যাতে তা সহনীয় হয় সেই দিকে থাকা উচিৎ আমাদের সচেষ্ট খেয়াল।
এরই ধারাবাহিকতায় অতি সাধারন কিছু সতর্কতা আমরা অবলম্বন করতে পারি একটু প্রাধান্য দিয়ে।
- গরমের মাত্রা ও বাচ্চাদের সহনীয়তা
সূর্য আজ মাথার ঠিক উপরে না নিচে তাই দিবে আমাদের প্রারম্ভিক দিক নির্দেশনা ও তার সাথে আনুসাঙ্গিক হবে বাচ্চার ঘামের মাত্রা। গরম কাল সুদীর্ঘ হলেও গরমের মাত্রা কিন্তু সবসময় এক নয়, কখনো কম আবার কখনো বেশী।
গরম কালের শুরু ও শেষে গরমের তেজ টা কম থাকলেও তা কিন্তু কখনো কখনো বাচ্চার স্বাস্থের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কারন বাচ্চারা কিছুক্ষণ গরমে ঘামায় আবা্র কিছুক্ষণ অনুভব করে শীত যা বাচ্চার শরীর স্বাভাবিক ভাবে নেয় না ফলে দেখা দেয় সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি।
আবার স্বভাবতই কোন বাচ্চা বেশী বা কম ঘামাতে পারে তাছাড়াও যে সব ক্ষুদে শিশু মায়ের দুধ খাচ্ছে তাদের গরমের মাত্রাটা একটু বেশীই হয়। এই সব দিক বিবেচনায় রেখে আমরা পদক্ষেপ নিব যেমন বাচ্চাকে ফ্যানের বাতাসে রাখবো নাকি এসির বাতাসে, তবে ছোট বাচ্চাদের এসিতে বেশী না রাখাই উত্তম।
- গরমে স্বস্তি আনে আরামদায়ক পোশাক

বাচ্চা মানেই রঙিন কাপড়ে মোড়া পুতুল, ভারি নকশার রাজকুমারীর পোশাক কিংবা জিন্স-শার্ট এ আঁটসাঁট স্মার্ট পোশাক। তবে এই পরিধেয় কেবল আমাদের চোখের জন্য আনন্দদায়ক মাত্র কিন্তু বাচ্চার শরীরের জন্য মোটেও আরামদায়ক নয়। তাই বাচ্চার পোশাকটি সর্বপ্রথম হওয়া উচিৎ আরামদায়ক ও স্বস্তির যা তার শরীর ও মন দুটোকেই স্বুস্থ রাখে।
সম্পূর্ণ সুতি কাপড়ের তৈরি, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা পোশাক যার মধ্য দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাস বাচ্চার শরীরে পৌছাতে পারে এমন পোশাক বাচ্চার জন্য সর্বোত্তম।
কালো রঙের কাপড়ে গরম বেশী অনুভূত হয় বলে তা বর্জন করা উত্তম। ঘরের গরম ও বাইরে রোদের তেজ বুঝে কিংবা এসিতে থাকলে ঠাণ্ডা বুঝে পোশাক নির্ধারণ করতে হবে। ঘাম যুক্ত কাপড় দ্রুত পরিবর্তন করা উচিৎ। তাছাড়া রোদে বাচ্চাকে ক্যাপ পরানোর অভ্যাস করতে পারলে তা খুবই উপকারী।
- গরমে বাচ্চার প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয় ও আনুসাঙ্গিক
‘এতো পানি পান করেও যেন তৃষ্ণা মেটেনা’ এটাইতো স্বাভাবিক, কারন তাপ শুষে নেয় আমাদের শরীরের সমস্ত পানি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও বেশী গুরুতর কেননা তারা তাদের পিপাসা না মেটার কথা সবসময় বুঝিয়ে বলতে পারেনা। তাই বড়দের কে নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বাচ্চাকে পানি ও পানি জাতিও খাবার খাওয়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার পানি খাওয়ার বোতলটি আলাদা রাখলে তার পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বাহারি কোমল পানীয়, রঙিন শরবত বা আইস্ক্রিম কিনে খাওয়ানোর থেকে ঘরে তৈরি রসালো ফল ও ফলের শরবত অধিক উপকারি। গরম কালে প্রায়ই শোনা যায় বাচ্চাদের পেট গরম হওয়ার কথা, তাই এ সময় তুলনামূলক কম গরম ও হালকা খাবার খাওয়ানো পেটের জন্য আরামদায়ক তা সেটা দুধ, ফর্মুলা বা অন্য যেকোনো খাবার হোক না কেন।
গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয় বলে বাচ্চাকে সবসময় টাটকা খাবার খাওয়ানো উচিত। বাচ্চার খাবার প্লেট, বাটি, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি আলাদা থাকলে তা সবসমায় পরিষ্কার আছে কিনা খেয়াল রাখাটা সহজ হয়।
- গরমে বাচ্চার পরিছন্নতা ও পরিচর্যা
‘আম্মু ঘামাচি কামড়াচ্ছে’ আসলেই কি ঘামাচি কামড়ায়? আসলে এটা কি? এটা আসলে একটি জীবাণু যার উৎপত্তি আমাদের ঘাম। কিছু সহজ নিয়ম কিংবা পরিছন্ন অভ্যাস আমাদেরকে পরিত্রাণ দিতে পারে এই জীবাণু থেকে। প্রতিদিন বাচ্চাকে গোসল করানো উচিত।
নিয়মিত শিশু উপযোগী সাবান ব্যাবহার করা; বাইরে বা গরম থেকে এসে মুখ, হাত, পা ধোয়া কিংবা জীবাণুমুক্ত ভেজা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করা; ঘাম যুক্ত কাপড় অতি দ্রুত পরিবর্তন করা; ঘাম শরীরে শুকানোর আগে তা নরম রুমাল বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলা এবং প্রতিবার কাপড় পরিবর্তনের সময় বাচ্চার উপযোগী পাউডার ব্যাবহার করা।
ছোট শিশুকে এক ডায়াপার বেশীক্ষণ পড়িয়ে রাখা যাবেনা, এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর ডায়াপার খুলে বাচ্চার গায়ে বাতাস লাগাতে হবে ও প্রতিবার পাউডার ব্যাবহার করতে হবে এতে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। গরমে বাচ্চাদের কাপড় বেশী ময়লা হয় তাই তা ঠিক মতো পরিষ্কার করতে হবে প্রয়োজনে অ্যানটিসেপটিক লিকুইড ব্যাবহার করতে হবে।

- গরমে বাচ্চাকে নিয়ে ভ্রমণে সতর্কতা
‘শীতকাল মানেই ভ্রমণকাল’ – তাই বলে কি গরমকালের ছুটি বৃথা?মোটেই না। বৃষ্টিতে সমুদ্রে গোসল আর দেশের বাড়ির আম কাঁঠাল খাওয়ার মজাই আলাদা, আর সঙ্গে যদি থাকে প্রাণপ্রিয় শিশুটি তাহলে তো আনন্দ শতগুণ; শুধু প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি আর কিছু সাবধানতা অবলম্বন।
ভ্রমনের জায়গাটার তাপমাত্রা আগে থেকে জেনে নিলে প্রস্তুতি সহজ হয়; বাচ্চার কাপড় নিতে হবে কিছুটা বাড়তি যাতে প্রয়োজনে ঘন ঘন বদলানো যায়। বাচ্চা সবসময় যে খাবারে অভ্যস্ত তার আয়োজন রাখার চেষ্টা করতে হবে, অনভ্যস্ত খাবার হজমে সমস্যা করতে পারে।
কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন- ঠাণ্ডা, জ্বর, বমি, পেট ব্যাথার ওষুধ, স্যালাইন,পর্যাপ্ত ডায়াপার, ক্যারিয়ার ইত্যাদি সাথে রাখা উচিৎ। তাছাড়া ছাতা ব্যাবহার আমাদের ও আমাদের বাচ্চাদের অনাকাঙ্ক্ষিত রোদ-বৃষ্টি থেকে বাচাতে পারে।
গরমের আরামদায়ক পোষাক হতে পারে ১০০% কটনের তৈরি রম্পার বা বেবি কিপার। হালুমকিসডের অনলাইনশপে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে। নিচের ছবিতে ক্লিক করে অনলাইনশপে যেতে পারেন! 👇👇👇
এভাবে গুনে গুনে সতর্কতার কিন্তু অভাব নেই, তবে আমাদের ছোট্ট সোনামণির সুস্বাস্থের সামনে এগুলো সতর্কতা নয় বরং ভালোবাসা ও যত্নের দৃষ্টি মাত্র।
‘আমার বাচ্চা একটু বেশী ঘামায়’; ‘গরমে ও প্রায়ই বমি করে’; ‘গরমের দিনে আমার বাচ্চা প্রায়ই অসুস্থ থাকে’। এসব বলে আমরা ব্যাপারটাকে সাধারন করে না দিয়ে বরং যদি এসব সতর্কতাকে আমাদের বাচ্চার যত্ন ও পালনের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করতে পারি তাহলেই আমাদের চাঁদের কনা বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যও হবে দীর্ঘস্থায়ী।