
বাংলা সিনেমার কোন দৃশ্যে অভাবী নায়কের হাত ধরে বেরিয়ে আসা নায়িকা নদী থেকে কলস ভরতি করে পানি আনতে গিয়ে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার পরের সিকোয়েন্সে ডাক্তার এসে মা হওয়ার শুভ সংবাদ দেয়, কিংবা নায়িকার লুকিয়ে লুকিয়ে আচার খাওয়া থেকেও দর্শক আঁচ করে নেন অনেক কিছুই! কিন্তু বাস্তবে দৃশ্যপট একটু ভিন্ন।
জেনে অবাক হতে পারেন- গর্ভাবস্থার হিসাব শুরু হয় আপনার সর্বশেষ পিরিয়ড বা মাসিক কবে হয়েছিল সেদিন থেকে। এটা হবু মায়েদের মতোই ভালো করে জেনে রাখা প্রয়োজন হবু বাবাদের!
গর্ভধারণ ঠিক কখন ঘটেছে তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব বলে ডাক্তাররা সর্বশেষ মাসিক চক্র থেকে গণনা করেন। এই সময় থেকে গণনা শুরু করে ৪০ সপ্তাহ পর সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ (এক্সপেক্টেড ডেলিভারি ডেট-ইডিডি) বের করা হয়। কিন্তু পিরিয়ড শুরুর নয় থেকে ২১ দিনের মাঝের সময়ের সফল মিলন থেকে হবু মায়ের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় বলে প্রকৃত গর্ভকাল সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ সপ্তাহ হয়ে থাকে।

আপনার স্বাভাবিক পিরিয়ড যদি ২৮ দিন অন্তর হয়, তবে সহজ কথায় নবম দিন থেকে আপনি উর্বর। এসময় ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে গর্ভনালীতে অবস্থান করে। এসময়ের সফল মিলন থেকে আসা অসংখ্য শুক্রাণুর মাঝে শুধুমাত্র উপযুক্তটিই সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে।
কম-বেশি সবারই জানা, তবুও আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া যে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে – তা সম্পূর্ণভাবে বাবার উপর নির্ভর করে।
মা কেবল এক্স ক্রোমোজোম বহন করেন, আর বাবা এক্স এবং ওয়াই উভয় ক্রোমোজোমই বহন করে থাকেন। বাবার কাছ থেকে আসা ক্রোমোজোম যদি ওয়াই হয় তবে সন্তান ছেলে হয়, আর বাবার কাছ থেকে আসা ক্রোমোজোম এক্স হলে সন্তান মেয়ে হয়।
সন্তানের লিংগ নির্ধারনের প্রক্রিয়াতো এক বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আলোচনা।
প্রাণের মাঝে আরেক প্রাণের সঞ্চার
গর্ভধারণ নয় মাসের এক দীর্ঘ যাত্রা। শারীরিক নানা পরিবর্তন আর মানসিক টানাপোড়নে একেক মেয়ের জন্য গর্ভধারণের গল্প একেক রকম। এ যেন গুটিপোকা থেকে প্রজাপতিতে পরিণত হওয়া!
প্রতিদিনের শরীর আর মনের এই পরিবর্তনগুলো কম-বেশী সবার হয়। এগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে, নিজের সাথে মিলিয়ে নেয়া অনেকটাই সহজ হয়।
গর্ভধারণের পুরো সময়কে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. প্রথম ট্রাইমিষ্টার (Trimester)-১ম সপ্তাহ থেকে ১৩ সপ্তাহ নিয়ে ১ম ট্রাইমিষ্টার।
২. দ্বিতীয় ট্রাইমিষ্টার-১৩ সপ্তাহ থেকে ২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত ২য় ট্রাইমিষ্টার।
৩. তৃতীয় ট্রাইমিষ্টার-২৮ তম সপ্তাহ থেকে ৪০ তম সপ্তাহ পর্যন্ত ৩য় ট্রাইমিষ্টার।
সফলভাবে নিষিক্ত একটি ডিম্বানু যাতে বিস্ময়কর প্রানের সঞ্চার ঘটেছে, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় জাইগোট (zygote) বলা হয়। একটি জাইগোট সফল মিলনের ২য় ও ৩য় সপ্তাহে গর্ভাশয়ে (uterus) জায়গা করে নেয় ও বিকশিত হতে শুরু করে। এইসময়ের জন্য ক্রান্তিকাল হলো অকাল গর্ভপাত বা (early miscarriage)।
দুঃক্ষজনক হলেও সত্য যে সফল ভাবে নিষিক্ত সকল জাইগোট শিশুর পূর্ণতা পায়না, আগামী নয়মাসের যাত্রা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে বুটের দানার মতো জাইগোটটি থেকেই আপনার শিশুটিকে পাওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে শিশু আপনার কল্পনার একটি ঝলকমাত্র। অনেক সাধনা করে অথবা হুট করে কিংবা অনাকাংক্ষিত- যেভাবেই আপনার মাঝে আরেক প্রাণের সঞ্চার হোক না কেন, প্রথম সপ্তাহে তা টের পাওয়া যায় না বললেই চলে!
অনেকে, যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করেননি, এমনকি করলেও তাদের এই সময়গুলো টের পাবার আগেই চলে যায়। অনেকে প্রথমবার মাসিকের তারিখ চলে গেলেও ভাবতে থাকেন, বোধহয় কোনো কারণে দেরি করে পিরিয়ড শুরু হচ্ছে হয়তো!!
প্রথম সপ্তাহের লক্ষণসমূহ
শুরুতেই সিনেমার কথা বলা হয়েছিল– অনেকক্ষেত্রে না মিললেও এক্ষেত্রে ওরকমটাই বাস্তবেই ঘটে! মর্নিং সিকনেস তথা পিরিয়ডের মাঝামাঝি বা শেষ সময়ে এসে যদি সকালে ঘুম থেকে উঠেই যদি বমি বমি ভাব লাগে/মাথা চক্কর দেয় কিংবা গা গুলিয়ে উঠে বুঝতে হবে লক্ষণ শুভ!
এছাড়াও, প্রথম সপ্তাহের অন্যান্য লক্ষণের মাঝে রয়েছে- ত্বকে র্যাশ, কারণ ছাড়াই ক্লান্ত লাগা, স্তনে ব্যথা, হুট করে খিদে বেড়ে যাওয়া এবং খাবার নয় এমন সব জিনিসও খেতে ইচ্ছে করা, সামান্য রক্তপাত (পিরিয়ডের মতই কিন্তু পিরিয়ড না), তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত প্রস্রাব এবং ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন হওয়া – ইত্যাদি প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ।