মনে পড়বে শুধু সে গান, “আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম . . .” কেউ হয়তো সে গানও ভুলে গেছেন নাগরিক পেষণে। ছিল বিস্তৃর্ণ মাঠ। সবুজের সমারোহ। হাত বাড়ালেই নদী।

খেলা তখন বোকা বাক্স বন্দি ছিল না। গাঁওয়ের মাঠে মাঠে চলতো হাডুডু, দাড়িয়া বান্ধা, গোল্লা ছুট, বৌ চি, এক্কা দোক্কা, ছোঁয়া ছুঁয়ি, সাত চাড়া। বহু প্রজন্ম খেলা বলতে এ গুলোকেই বোঝে। খাঁটি দেশিয় খেলা এ সমস্ত। ফুটবল ছিল। বাংলা জনপদে ছিলেন এক জন ফুটবলের জাদুকর সামাদ। যিনি তার আমলে বিশ্ব জুড়ে ফুটবল শৈলীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু ফুটবল তখন পর্যন্ত গ্রাম বাংলার প্রধান খেলা ছিল না। দেশিয় খেলায়ই মেতে থাকতেন বেশির ভাগ মানুষ। হায়, সেদিন!
আজকের শিশু কিশোর তরুণরা এর সম্পর্কে কমই জানে না। খেলা বলতে এখন যেন একটাই। সুন্দরবনে বাঘ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা কম লোকের। জাতীয় ক্রিকেট দলকে ডাকা হচ্ছে ‘টাইগার’ নাম এ। নি:সন্দেহে ক্রিকেট দলের বিশ্ব পর্যায়ে উত্থান ও সাফল্য আমাদের জন্য গর্বের। কিন্তু হাহাকার থাকবে হারানো খেলার জন্য। যে গুলো ছিল দেশি।
বিশ্বায়নের নামে এভাবেই একক পুঁজির কর্তৃত্বে বিপন্ন হচ্ছে বহু মাত্রিকতা। খেলার জগত এর ভিন্ন থাকবে কেন? লোকজ গ্রামীণ খেলা তাই বিলিন প্রায়। আর জনপ্রিয় খেলার নামে চলছে গুটি কয়েকের কদর। আর কদিন পর আমাদের স্মৃতি থেকেও হয়তো মুছে যাবে সেই মুখরিত খেলার দিন।

শহরের শিশুদের সমস্যা বহু। শহরে মাঠ হাতে গোনা। অধিকাংশ স্কুলেও নেই খেলার মাঠ পর্যন্ত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বন্দি শিশুরা খেলছে ঘরে, এক চিলতে বারান্দায় অথবা ছাদে। তার চেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে শিশুদের ডিভাইস আসক্তি। দিনের বড় একটা সময় তাদের কাটছে ফোন, ট্যাব, টিভি, কম্পিউটারে। এতে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। স্থুলতা সমস্যায় ভুগছে শিশু। আশঙ্কা আছে আরো মারাত্মক রোগ বিস্তারের।
এ পরিস্থিতিতে তাই অভিভাবকদেরই সক্রিয় হতে হবে শিশুর স্বার্থে। তাদের শরীর চর্চা ও খেলায় উৎসাহ দিতে হবে। খেলা ধূলা একটি জৈবিক প্রক্রিয়ায় দেহ ও মনকে সতেজ রাখে। তাই সারা দিন শুধু পড়া চাপিয়ে দেয়া শিশুর বিকাশ ব্যাহত করবে। তাকে খেলায় উৎসাহি করা দায়িত্ব বাবা, মায়ের। খেলার কোনো জাতিয়তাবাদ নেই। কোনো বিদেশি খেলায়ই নিরুৎসাহ করার কিছু নেই। তবে দেশিয় অনবদ্য খেলা গুলোর যত্ন , বিকাশ ও চর্চা চাই। ফিরে আসুক গ্রামীণ লোকজ খেলা। আজকের শিশুরাও এর সাথে পরিচিত হোক। অতীত প্রজন্মের সঙ্গে নতুনের মেলা বন্ধনের এমন প্রহর দেখতে আমরা প্রত্যাশী।