support@halumkids.com

Kids Books, Clothing, Toys at Affordable Price

ডিভাইস নির্ভরতায় শিশুর মারাত্মক ‘কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার’

শিশুদের ডিভাইস নির্ভরতার এক মারাত্মক ক্ষতির কথা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এটি হচ্ছে, শিশুরা দেরিতে কথা বলা শিখছে। এ ক্ষতির শিকার অভিভাবকরা বলছেন, একদম ছোটবেলা থেকেই শিশুকে মোবাইল ফোন দিয়ে বা টেলিভিশন চালিয়ে খাবার খাওয়ানো হতো, শান্ত রাখা হতো। এর প্রভাব পড়েছে শিশুর কথায়।

শিশু চিকিৎসক ও মনোচিকিৎসকদের মতে, নানা কারণে শিশুরা দেরিতে কথা বলতে পারে। এটা বংশগত বা মস্কিকে কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে। তবে এই সময়ে বিশেষ করে শহর এলাকায় শিশুদের বাবা-মা সময় না দেওয়ায় তারা দেরিতে কথা বলছে। তারা যে কথা শিখবে তার আগে তাদের কথা শুনতে হবে। আর এই “ইন্টার‌্যাকশন” না হলে শিশুরা কথা বলা শিখবে না।

বাবা, মা অফিসে। তখন অনেক বাসায়ই গৃহকর্মীরা শিশুদের মোবাইল ফোন দিয়ে বা টিভি ছেড়ে বসিয়ে রাখে। তখন যোগাযোগ হয় এক পাক্ষিক। শিশুটি শুধু শোনে। কিন্তু বলতে শেখে না। এটিকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে “কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার”।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটার কোনো জরিপ নেই। তবে আমরা এখন শিশুদের এই ধরনের সমস্যা বেশি পাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “শিশুরা যদি আট বছর বয়সেও কথা বলতে না পারে তাহলে সেটা ভয়ের। তখন তাদের আর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কথা বলানো সম্ভব নয়। তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ও কেয়ার প্রয়োজন হয়।”

তিনি বলছেন, শিশুদের যদি বাবা-মা সময় না দেয়, সে যদি ডিভাইস নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে যে তার পরিবেশের কারণেই ঠিক সময়ে কথা বলতে পারবে না।

সাধারণত একটি শিশু এক বছর বয়স থেকে কথা বলা শুরু করে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল আলম। তিনি বলেন, “যাদের কথা বলতে দেরি হয় তাদের মানসিক বৃদ্ধি দেরিতে হয়। দুই বছরে শিশু দুই-চারটি শব্দ বলবে। সেটা যদি সে আট বছরে বলে তাহলে তার মানসিক বয়স দুই বছর, যদিও ফিজিক্যাল বয়স আট বছর।”

তিনি জানান, এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বে এখন দেখা যাচ্ছে। কারণ শিশুদের বাবা- মা সময় না দিয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্ভর করে তুলছে। মোবাইল ফোন হলো ওয়ান ওয়ে। এ দিয়ে শিশু কথা শেখে না। ফোনের ডিসপ্লে হয়ে যায় তার পৃথিবী। কোনো কিছু শেয়ার করা, কথা বলা তার চিন্তার বাইরে থেকে যায়।

তাই শিশুদের সময় দিতে হবে। তাদের কাছ থেকে ডিভাইস দূরে রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি জানান, কথা বলতে দেরি হলে স্পিচ থেরাপিসহ নানা চিকিৎসা আছে। শিশুর ফিজিক্যাল বয়স ও মানসিক বয়স পরিমাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ড. হেলালউদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটা আসলে শিশুদের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার। আমরা জরিপে দেখেছি শিশুদের শতকরা ১৩% নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগে। তাদের মধ্যে শতকরা ৬% অটিজমসহ কম্যুনিকেশন ডিজঅর্ডারের সমস্যায় ভোগে।”

তিনি বলেন, “শিশু তার প্রথম বছরেই মানে ১২ মাসের মধ্যে বাবলিং করবে। আর ছয় বছরের মধ্যে পুরো কথা বলা শিখে যাবে। এরচেয়ে দেরি হলে চিন্তার কারণ আছে।”

শিশু ঠিক সময়ে কথা না বললে সাধারণভাবে অভিভাবকরাই এর জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, “শিশুর সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাকে কথা বলতে উৎসাহিত করতে হয়। এটা তো যন্ত্র করবে না। আর শিশুদের অনেক সময় চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। কথা বলতে বারণ করা হয়। এটাও ক্ষতিকর।”

এই চিকিৎসক শিশুদের সঙ্গে বাবা-মার কোয়ালিটি সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামাজিক করার পরামর্শ দেন।

Leave a Comment